Friday

ছক পূরণ : সিনেমার পেছনের কথা

সম্প্রতি, ২৩ এপ্রিল ২০০৮, জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে উদ্বোধনী প্রদর্শনী হলো রূপান্তর সিনেমা দলের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা 'ছক পূরণ' এর। সিনেমার পরিচালনায় ছিলেন দলের খন্দকার মোঃ জাকির। রূপান্তর-এর কাজের ধরন, দলের সীমাবদ্ধতা আর ছক পূরণ সিনেমা তৈরির টুকটাক অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন তাঁর এ লেখায়।

এক.
কোন ধরনের সিনেমা পছন্দ করেন দর্শক?

সিনেমা বানানোর আগে নিজেকে এই প্রশ্ন করেছেন তো মরেছেন।

এই ‘দর্শক’ মানে কোন প্রজাতি? এটিএন বাংলায় ইভা রহমানের মিউজিক ভিডিওর ভক্ত (বা ভোক্তা)? কানে হেডফোন গুজে রেডিওর লাভগুরু শোনা শ্রোতা? নাকি যিনি পঁচিশ পয়সা কলরেটে কথা বলে ‘আজীবন স্বাধীনতা’র স্বাদ পাচ্ছেন বলে আহ্লাদিত, তিনি? দর্শকের প্রজাতি বিভাজন এবং তাদের পরিচয় সত্ত্বাকে কুচি কুচি করে কেটেও প্রশ্নের উত্তর মেলে না।

সুতরাং দর্শকের পছন্দের প্রশ্ন আপাতত বাদ।

উল্টো দিক থেকে প্রশ্ন আসুক। আমরা, রূপান্তর দল, কোন ধরনের সিনেমা বানাতে পছন্দ করি? প্রশ্নটা জুতসই হলো। উত্তর আসে এমন :

প্রায়-নেই-বাজেটের সিনেমা: সিনেমার বাজেট বেশি হলেই যে সেটা সিনেমা হয়ে ওঠবে তেমন হাদিস নেই। আমাদের গাঁটের টাকা যদ্দূর খরচ করতে পারবো, নির্দিষ্ট সময়ে সাধ্যের ভেতর যা শেষ করতে পারা যায়, তাই আমাদের পছন্দের সিনেমা।

গল্পঅলা সিনেমা:
গল্প বলার টেকনিকে সিনেমা-ভাষা নিয়ে যদ্দূর খেলতে পারি। লিনিয়ার ননলিনিয়ার ন্যারেটিভ ননন্যারেটিভ কমেডি ট্রাজেডি সিটকম ডকু হরর ব্লাহ ব্লাহ – সব কিসিমের চলবে। তবে গল্প থাকতে হবে কোনো।

বোধগম্য সিনেমা: প্রথমত, রূপান্তর দলের সব সদস্যের কাছে বোধগম্য হলো কিনা। চিত্রনাট্য থেকে ডিভিডি রাইট পর্যন্ত সবকিছু যুক্তি পরম্পরায় ছিল কিনা। শেষে সিনেমা মালটা নিজেদের কাছে যেন সো-কল্ড আর্ট ফিলিম না ঠেকে। আবার ঢালিউডি চাকভুমচাক ফ্লেভারও যেন না হয়ে যায়।

মানে দাঁড়ালো, নিজেদের কারিগরি আর অবকাঠামো সীমাবদ্ধতাটা চিহ্নিত করা। সাধ্যের ভেতর কোন ক্যামেরা-লোকেশন-আলো-প্রপস-কস্টিউম জোগাড় করা যাবে? সে অনুযায়ী চিত্রনাট্য লেখা, শুট করা, সম্পাদনা করা, প্রচারণা ইত্যাদি।

দুই.
ছক পূরণ বানানোর পরিকল্পনা আসে ডিইউএফএস দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেয়ার ইচ্ছা থেকে। সীমাবদ্ধতার তালিকা বানানো যাক আগে:

a) ক্যামেরা আছে অপুর – মিনিডিভি হ্যান্ডিক্যাম। কদিন পর পর যার ব্যাটারি রোগ হয়। সেটা দিয়েই শুট হবে।
b) কোনো আলোক সরঞ্জাম নেই। ফলে ইনডোর বা রাতের দৃশ্য বাদ। শুট করতে হবে দিনের আলোয়, আউটডোরে।
c) সাউন্ড বুম নেই। অ্যামবিয়েন্ট শব্দ নেয়া যাবে ক্যামেরার বিল্ট-ইন মাইক্রোফোনে। সংলাপ নেয়া কঠিন হবে। সংলাপ ছাড়াই হোক। সংলাপ না থাকলে মুখ দেখানোর দরকার কী? শরীরের ভাষা তো মুখেই আটকে না, হাত পা দিয়েও করা যায়। তাই হবে।
d) লোকবল কম। ব্যবস্থাপনার ঝক্কি কমাতে শুটিং হবে একটা লোকেশানে, আউটডোরে। আরও ভালো হয় ক্যামেরার অবস্থানও পরিবর্তন না হলে।
e) জিকোর এডিটিংঅলা পিসি আছে। তাতেই সম্পাদনা করতে হবে।

এবার গল্প তৈরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সামনে এক মুচি বসে। তাকে নিয়ে কোনো গল্প বানানো যায় কিনা, ভাবতে থাকা। জুতার সুখতলা দেখে দেশের অবস্থা অনুমান করবে মুচি। মুচির চোখ দিয়ে কারো প্রেমপর্ব দেখানো। উদ্ভট জুতাবাবার কাহিনী। অপয়া সোনার লকেট পাওয়ার গল্প। সুন্দর চেহারার গার্মেন্টস কর্মী, তার ছেড়া স্যান্ডেল সেলাই করার টাকা না থাকার কষ্ট বুঝতে পারে মুচি, তার গল্প। মুচি মুচি মুচি। সময় যায়, গল্প আর ভালো লাগে না। আর গল্প পছন্দ হলেও আমার পরিচালনা-জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় কুলোবে কিনা, বুঝে উঠতে পারি না।

হ্যাঁ। আবার ফিরে যাই সীমাবদ্ধতায়, তাকে বুঝতে চাই। কী আছে আমাদের সাধ্যে, কতটুকু পরিচালনা করতে পারবো? সীমাবদ্ধতাই তো আমাদের (রূপান্তর দলের) লক্ষ্ণী। শেষে রক্ষা করলো জিকোর পা আইডিয়া। পছন্দ হলো চিত্রনাট্য।

তিন.
অন্য সিনেমা থেকে ‘ছক পূরণ’ আলাদা হতে পারে শুধু এর সিনেমা-ভাষার কারণে। ভিডিওর সাথে টেক্সট, সরল দ্বিমাত্রিক অ্যানিমেশন আর ছক মিশিয়ে অল্প সময়ের ভেতর একটা গল্প বোধগম্য করে উপস্থাপনা—আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিল।

তবে অপরাধবোধের খাতায় আছে, সংগৃহীত মিউজিকের ব্যবহার। হার্ডডিস্কের এমপিথ্রি ভাণ্ডার থেকে কপিরাইট মিউজিক লাগাতে হয়েছে, যদিও সিনেমা শেষে তার ক্রেডিট গেছে। শুটিঙেও ভুলত্রুটি হয়েছে, মিউজিক দিয়ে তা ঢাকার একটা প্রয়াস ছিল। শুধু আবহ আমবিয়েন্ট শব্দে ঠিক ফুটে উঠছিলো না গল্পটা।

‘প্রদর্শনীর সময় উপস্থিত দর্শকের হাততালি = দৃশ্যটি বোধগম্য হয়েছে’
- এই ইকুয়েশনে ফেললে মনে হয় : সিনেমার শেষ ছক পূরণের দৃশ্যটা কঠিন হয়ে গেছে। ট্রাফিক সিগনালের সংকেতচিহ্ন না দিয়ে টিক চিহ্ন দিলেই ভালো হতো।

চার.
বাংলাদেশের নতুন তরুণ নির্মাতারা, যারা আমাদের মতো সিনেমা বানাতে চান, আগে সীমাবদ্ধতাগুলো ঠিক করে নিন। তারপর ভাবুন কোথায় কীভাবে কার জন্য দেখাবেন, কী বলতে চান, কেন বানাবেন? আগে সীমাবদ্ধতার তালিকা তৈরি। তারপর তৈরি করুন গল্প, চিত্রনাট্য।

'ছক পূরণ' সিনেমা ঠিকঠাক শেষ করতে পারার কৃতিত্ব রূপান্তর সিনেমা দলের প্রতিটি সদস্যের। কৃতজ্ঞতা রইলো।

রূপান্তর ব্লগ / ২৫ এপ্রিল ২০০৮ / ঢাকা

Wednesday

Premiere of Chhok Puron short film



You are welcome to enjoy the premiere of Chhok Puron (ছক পূরণ) short film at 2nd International Inter-University Short Film Festival 2008.

Chhok Puron / MiniDV / 4 min / Color / 2008

Venue: Goethe Institut Auditorium
House 10, Road 9 (new), Dhanmondi R/A
Date: 23 April 2008
Time: 5:30 pm

Synopsis: Imran is looking for job. Job is not looking for him. He gets job but in a wrong time. This film was shot without any faces because legs can tell more. Sometimes.

Crew
Director: Khondokar Md Jakir
Script / Sound Design / Animation / Editing: Ishtiaque Zico
Camera / PM: Naimul Islam Opu
Art Director: Md Hasan Ashik Rahman
Still: Tazul Islam

This short film is a RUPANTOR Cinema Team production.