Sunday

রেল ক্রসিং বার = আমাদের ইচ্ছেডানা

নায়ক মরা ঘাসের উপর শুইয়া আছে। আর ক্যামেরা আসমানে উঠিয়া ভাসিতেছে আহা। বড় বাজেটের সিনেমায় ক্রেন শটের এইরূপ দৃশ্য অবলোকন করিয়া দীর্ঘদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়াছি। কারণ নিত্যবেলা ক্রেন বা জিব ভাড়া করার সামর্থ্য আমাদিগের নাই। হি হি হি হি।

সিস্টার ব্রাদারগণ, হাসিবেন না। কী করিয়া স্বল্প খরচে ভাসমান শট লওয়া যায়, সেই তরিকা লিখিয়াছেন রূপান্তর দলের নাঈমুল ইসলাম অপু

প্রথমেই একটু পয়সার হিসাব হোক।

বাংলাদেশে পেশাদারী মানের ক্রেন ভাড়া নিলে প্রতিদিন গুনতে হয় প্রায় সাত হাজার টাকা। বিকল্প আছে জিব।

জিব ক্রেনের বাচ্চা সংস্করণ। ট্রাইপডের সাথে লম্বা ডাণ্ডা (জিব আর্ম) লাগানো থাকে। ডাণ্ডার এক মাথায় বসানো হয় ক্যামেরা। আরেক মাথায় ভারী ওজন, ভারসাম্য ঠিক রাখতে। ডাণ্ডাটি উপর-নিচ-ডানে-বাঁয়ে ঘোরানো যায়। ফলে পর্দায় জিব শট দেখে মনে হয়, ক্যামেরা যেন ভাসছে ইচ্ছেডানায়।

কিন্তু হাইড্রলিক জিব-এর ভাড়াও কম না; দিনপ্রতি চার হাজার টাকার মতো।

জিব শটের নমুনা দেখুন ইউটিউবের একটা ভিডিও ক্লিপে

টোকাই’ স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা পরিচালনার সময় খুব ইচ্ছা হয় এরকম জিব শট নেয়ার । ক্যামেরা মুভমেন্ট ভেবেছিলাম এমন : রেল লাইন বরাবর দূর থেকে হেঁটে আসবে প্রধান চরিত্র- টোকাই। শটটি শুরু হবে প্রায় ৩০ ফুট ওপর থেকে; লং শট। টোকাই এগিয়ে আসবে। আর সেই সাথে ক্যামেরা নিচের দিকে নামবে।

গেণ্ডারিয়া রেল স্টেশনে বসে ভাবছিলাম কীভাবে এ জিব শট নেয়া যায়। তখন কমলাপুর থেকে একটি ট্রেন আসছিল গেণ্ডারিয়ার দিকে। সিগনাল ম্যান ট্রেনটি আসার আগে রাস্তার ‘রেল ক্রসিং বার’ নামিয়ে দিলেন গিয়ার-পুলি ঘুরিয়ে।

এই ‘রেল ক্রসিং বার’ দুটোকেই জিব আর্মের মতো মনে হলো। ক্রসিং বারের মাথায় একটি ইউ (U) আকৃতির ধারক দিয়ে হ্যান্ডিক্যামটা লাগিয়ে দিলেই তো জিব শট নেয়া যায়। বাকি থাকে শুধু সিগনালম্যানকে রাজি করানো (মানে পটানো)।

এভাবেই নেয়া হয় সেই ঐতিহাসিক জিব শট।

আমাদের ইচ্ছেডানা
পরে তৈরি করি স্বল্প-বাজেটের জিব। রূপান্তরের ইচ্ছেডানা। লেগেছে :
  • পুরোনো একটা ট্রাইপড
  • ইকুয়েটরিয়াল ধারক
  • ১২ ফুট লম্বা এক ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ
ইকুয়েটরিয়াল ধারক সাধারণত ব্যবহার হয় টেলিস্কোপে। এর সুবিধা, XYZ তলে ইচ্ছেমতো ঘোরানো যায়। এমনকি কত ডিগ্রি ঘুরছে, তারও হিসাব করা যায়।

দৃশ্য ধারণ করার সময় শটটি ঠিক হলো কিনা, ক্যামেরার ফ্রেম ঠিক আছে কিনা, এসব দেখার জন্য জোগাড় করেছি ছোট একটি টিভি। ক্যামেরার অডিও-ভিডিও আউটপুট থেকে লম্বা তার ঢুকেছে সেই টিভির ইনপুটে। তারের ঝামেলা না চাইলে ট্রান্সসিভার (transceiver) যন্ত্রও ব্যবহার করা যেতে পারে।

ইচ্ছেডানাটা বেশ ভালো কাজ দিচ্ছে। তবে পয়সা পেলে যন্ত্রটায় আরও কিছুটা মডিফাই করা যেত।

নাঈমুল ইসলাম অপু / রূপান্তর ব্লগ / ৪ মে ২০০৮ / ঢাকা